
স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয়ের ৪০ বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার ৪৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বিশাল সংবর্ধনার মাধ্যমে বিজয়ের মাসের শেষ দিন উদযাপন করলো রোটারী ক্লাব অব ভৈরব। এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পরিচালনায় ভৈরব রোটারী ক্লাবকে সার্বিক সহায়তা করেছে সুখবরের একটি টীম। পবিত্র কোরআন তিলয়াত এবং শহীদ ও মরহুম মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আয়োজন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম (অবঃ) এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাজমুল হাসান এবং সেই সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন পিডিজি রফিক আহমেদ সিদ্দিক এমপিএইচএফ বি এমডি।
এছাড়াও অতিথিবৃন্দের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ মিজানুর রহমান, কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মীর রেজাউল আলম, জেলা প্রশাসক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, ভৈরব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ আলহাজ্ব ডঃ মোস্তাক আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খোরশেদ আলম।
ফুল দিয়ে সকল অতিথিদেরবরণ করে নেন রোটারিয়ানবৃন্দ। সুখবর এর পক্ষ থেকে এহসানুল হক ভুঁইয়া লাল সবুজের সমাহার এক সম্মাননাসূচক উত্তরীয় পরিধান করিয়ে দেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দদের।
প্রজেক্টরে চলছিলো সুখবর এর সংগৃহীত বাংলাদেশের ইতিহাস ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র, ৪৫০জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবারো এক জায়গায় একত্রিত হয়ে পুরনো সহযোদ্ধাদের জড়িয়ে ধরা, সব মিলিয়ে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিল সেই ১৯৭১।
কোন কোন মুক্তিযোদ্ধা কেঁদে উঠছিল ক্ষণে ক্ষণে। কেউ কেউ স্মৃতি চারণ করছিলো এবং সম্মুখ যুদ্ধের বর্ণনা দিচ্ছিলো অন্যদের। এমন আবেগঘন ও অশ্রুসিক্ত মুহুর্ত পুরোদিন দিন জুড়েই ছিলো। এরই মধ্যে আয়োজক কমিটির প্রধান রোটারিয়ান আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির পিএইচএফ এর আহবানে একে একে বক্তব্য রাখেন অতিথিবৃন্দ। বিশেষ অতিথি পিডিজি রফিক আহমেদ সিদ্দিক যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং যুদ্ধকালীন কমান্ডার রোটারিয়ান আলহাজ্ব মোঃ সায়দুল্লাহ মিয়া এদিন শুধু রোটারী ক্লাব অব ভৈরব এর চার্টার্ট প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, তিনি কথা বলছিলেন সকল মুক্তিযোদ্ধাদের হয়ে। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের হয়ে তিনি মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট দাবী জানান ভাতা বৃদ্ধির, একটি মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সের, যার আয় থেকে আর্থিকভাবে দুর্বল মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা হবে।
অতঃপর মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাজমুল হাসান আহ্বান রাখেন মন্ত্রী মহোদয়ের প্রতি ভৈরবের ১১ জন শহিদের নাম সরকারী গ্যাজেটের মাধ্যমে সরকারী তালিকায় আনার জন্য। তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন, অনেকেই বলে মুক্তিযোদ্ধারা অসহায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নামের আগে কখনো অসহায় থাকতে পারে না। তাদেরকে শুধু একটি বিশেষণই উপাধি হিসেবে দেয়া যেতে পারে এবং তা হচ্ছে ‘বীর’।
পরিশেষে মন্ত্রী মহোদয় তার যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, সকল বাংলাদেশী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়। তিনি জানান নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে সরকার যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করছে। তিনি আরো বলেন, ভৈরব উপজেলায় একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, আবাসন প্রকল্প ও ১১ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম সরকারি গ্যাজেটের মাধ্যমে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে শীতবস্ত্র প্রদান, সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান এবং সব শেষে প্রীতিভোজের মাধ্যমে শেষ হয় এই আবেগঘন দিনের।