275 views 2 secs 1 comments

শেয়ারবাজারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ২১ সিদ্ধান্ত ঘোষণাঃ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে

In Business, Finance
October 01, 2022
শেয়ারবাজারে

অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর নানা পদক্ষেপ ও ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় বিশেষ স্কিমসহ শেয়ারবাজারে দীর্ঘ মেয়াদে আস্থা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ২১ দফা সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।

বারবার দিনবদলের পর গতকাল বুধবার এসইসির সভাকক্ষে এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে সিদ্ধান্তগুলো ঘোষণা করেন। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি_তিনস্তরে বিভাজিত এই প্রণোদনা।

এসইসি ঘোষিত গুচ্ছ সিদ্ধান্তের অন্তত ৯টি প্রত্যক্ষভাবে বাজারে অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন_শেয়ারবাজারের ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যাংকগুলো তাদের সাবসিডিয়ারি কম্পানি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে যে মূলধন দিয়েছে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হবে না।

এর আগে এই বিনিয়োগকে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমার মধ্যে ধরা হতো। এতে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছিল। এ ছাড়া কোনো কম্পানিতে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ থাকলেও সেটা শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হবে না।

এখন থেকে লাভ ও লোকসান সমন্বয় করে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের নিরাপত্তা জামানত বা প্রভিশনিং করতে হবে। আগে শুধু লোকসানের হিসাব যুক্ত হতো। এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। বহুল আলোচিত সিআরআর ও এসএলআর না কমানো হলেও এসব সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।

গতকাল ঘোষিত সরকারের এই প্রণোদনা সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ঘোষিত সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এ ছাড়া শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ করের পুরোটাই প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিদেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে বিদেশি ব্রোকারেজ ফার্মকে প্রদেয় কমিশন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অথবা দলিলাদি জমা সাপেক্ষে দ্রুত পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর অনুকূলে প্রদত্ত সীমার অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ের সময় আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে।

এত দিন মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সবটুকু তহবিল গঠিত হতো মূল ব্যাংক থেকে। এসইসির নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর তহবিলের ৫১ শতাংশ মূল ব্যাংকগুলো দিতে পারবে। বাকি টাকা মার্চেন্ট ব্যাংক বা সাবসিডিয়ারি কম্পানিগুলো নিজ উদ্যোগে অন্য জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারবে।

চেয়ারম্যান জানান, অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে আরো বেশি করে বিনিয়োগে সম্মত হয়েছে। প্রশ্নাতীতভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার কথা পুনরুল্লেখ করেন তিনি। এ ছাড়া কম্পানির পরিচালকদের সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখার বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করেন তিনি। বীমা তহবিলে জমে থাকা বিপুল পরিমাণ টাকা অনতিবিলম্বে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে বীমা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মত হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘পুঁজিবাজার বিকাশে এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক ও শক্তিশালী পুঁজিবাজারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি আমরা। কোনো অন্যায় দাবি বা অনৈতিক চাপের মুখে কোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করিনি।’

স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ : (এখনই বাস্তবায়নযোগ্য)

  • শেয়ার ব্যবসায় নিয়োজিত ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কম্পানির অনুকূলে ব্যাংক প্রদত্ত মূলধন ওই ব্যাংকের এঙ্পোজার টু ক্যাপিটাল মার্কেট হিসেবে গণ্য হবে না।
  • কোনো কম্পানির শেয়ারে ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি ইক্যুইটি ইনভেস্টমেন্ট ওই ব্যাংকের ক্যাপিটাল মার্কেট এঙ্পোজার হিসেবে গণ্য হবে না।
  • বৈদেশিক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে বিদেশি ব্রোকারেজ ফার্মকে প্রদেয় কমিশন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অথবা দলিলাদি দাখিল সাপেক্ষে দ্রুত প্রেরণের অনুমতি প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে বিদেশি পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপকরা আরো বেশি বেশি তহবিল বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।
  • বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক এবং অনিবাসী বাংলাদেশিদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে অর্জিত লাভের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন ট্যাঙ্ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে বাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং বিদেশি তহবিলের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।
  • পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ উদ্ভূত কোনো ক্ষতির জন্য প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গেইন/লস নেট অফ করে প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে। উল্লেখ্য, আগে শুধু নেট লসকে বিবেচনায় নেওয়া হতো।
  • শেয়ার ব্যবসায় নিয়োজিত কোনো ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবসিডিয়ারি কম্পানির অনুকূলে প্রদত্ত ঋণ সিঙ্গেল ব্রোয়ার এঙ্পোজার লিমিট অতিক্রম করে থাকলে সীমা অতিরিক্ত ঋণ সমন্বয়ের জন্য দুই বছর সময় পাবে (২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত)।
  • অর্থমন্ত্রীর পরামর্শে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আরো অধিক হারে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে সম্মত হয়েছে।
  • বীমা তহবিলের (লাইফ ও নন-লাইফ) বিনিয়োগযোগ্য অর্থ অনতিবিলম্বে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বীমা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া সরকার বীমা শিল্পের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে।
  • শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ধারণকৃত শেয়ারের পরিমাণ অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সীমার নিচে রয়েছে। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এসইসির কম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ওই সীমা সব সময়ের জন্য নূ্যনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
  • এত দিন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারির তহবিলের ৯৯ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত সরবরাহ করত প্যারেন্ট কম্পানিগুলো (ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ইনস্যুরেন্স কম্পানি)। এখন থেকে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৫১ শতাংশ প্যারেন্ট কম্পানি থেকে এবং অবশিষ্ট অংশ অন্য যেকোনো তহবিল থেকে নিয়ে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারিগুলো পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবে। এতে মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারিগুলোর মূলধন বৃদ্ধি পাবে এবং তারল্য সংকট দীর্ঘ মেয়াদে অবসান হবে।

মধ্যমেয়াদি পদক্ষেপ : (তিন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য)

  • গুজবনির্ভর ও নিউজ সেনসেটিভ শেয়ারবাজারের পরিবর্তে একটি পূর্ণ সচেতন মূলধন বাজার তৈরির লক্ষ্যে এসইসি ইনভেস্টমেন্ট অ্যাডভাইজরি সার্ভিস উন্মুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে ব্রোকারেজ হাউসগুলো পেশাদার, দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক নিয়োগ দিতে বাধ্য।
  • ইনভেস্টর্স একাডেমিশিয়ান ও পলিসি মেকারদের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন নিশ্চিত করার জন্য এসইসি ইক্যুইটি রিসার্স পাবলিকেশন উন্মুক্ত করবে।
  • পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করপোরেট গভর্নেন্স গাইডলাইন তৈরি করা হবে।
  • মার্চেন্ট ব্যাংক ও সাবসিডিয়ারি কম্পানিগুলোর নিজস্ব মূলধন বাড়ানোর জন্য এসইসি দ্রুত উপায় উদ্ভাবনের পদক্ষেপ নেবে।

দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ : (চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য)

  • পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্টিং এবং অডিটিং ডিসক্লোজারের গুণগত মান উন্নত করার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) প্রণয়ন করা হবে।
  • বর্তমান এসইসির ইনসাডার ট্রেডিং আইন অনেক দুর্বল। এটিকে আরো গভীর এবং কঠোর করা হবে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে।
  • আমাদের দেশের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী রক্ষা আইন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারছে না। উন্নত দেশগুলোর আদলে আমাদের এ আইন যুগোপযোগী করা হবে।
  • স্টক এঙ্চেঞ্জগুলোর করপোরেট গভর্নেন্স নিশ্চিত করতে আমাদের স্টক এঙ্চেঞ্জগুলোকে দ্রুত ডিমিউচুয়ালাইজ করা হবে।
  • মিউচ্যুয়াল ফান্ড সেক্টরকে আরো শক্তিশালী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে এসইসি।
  • উন্নত সার্ভিল্যান্স সিস্টেম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসইসি পুঁজিবাজারের তদারকি কার্যক্রম জোরদার করবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত না হয়।

ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিশেষ স্কিম

স্বল্প পুঁজি ও মার্জিন ঋণ নিয়ে যেসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য একটি বিশেষ স্কিম প্রণয়ন করা হয়েছে। এর জন্য আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফায়েকুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হবে।

কমিটির অন্যান্য সদস্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন প্রতিনিধি, এসইসির একজন প্রতিনিধি, সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দুই স্টক এঙ্চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। কমিটির প্রয়োজনে অতিরিক্ত সদস্য যোগ করতে পারবে। এ কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন বিবেচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে জমা দেবে।

সূত্রঃ দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২৪ নভেম্বর ২০১১

সপম্পর্কিত অন্যান্য পোস্টসমূহ:বাংলাদেশকে ১২০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংকআইন সংশোধনের কাজ শুরু করেছে এসইসিই-পেমেন্ট:ব্যাংকের লেনদেন সহজীকরণে নতুন আইন আসছে

One comment on “শেয়ারবাজারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ২১ সিদ্ধান্ত ঘোষণাঃ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে
    sklep online

    Wow, awesome blog layout! How lengthy have you been running a blog for?
    you make running a blog look easy. The entire glance of your web site is fantastic, as well as the content!

    You can see similar here ecommerce

Leave a Reply